ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে টানা তিন দিনের অতি জোয়ারের প্রভাবে বরগুনা জেলার বিভিন্ন স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙে ও উপচে লোকালয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। এতে জেলার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ফসলী ও মাছের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত প্রবল জোয়ারের তোড় অব্যাহত ছিল। এই দিনও বাঁধভাঙা জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে জনজীবনে ভোগান্তির সৃষ্টি করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের দাবি সিডরের মতো সুপার সাইক্লোনের পর দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার পদক্ষেপ না নেয়ায় ইয়াসে তাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। লোকালয়ে পানি প্রবেশ করার কারনে রোপা আউশসহ কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
বোরো ধানের বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া মাছের ঘের তলিয়ে চাষীদের কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। বুধবার রাত থেকে জোয়ারের প্রবল তোড়ে বিভিন্ন এলাকার বাঁধ ভেঙে লোকালয় ও ফসলের মাঠে পানি প্রবেশ করেছে। বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকালে বরগুনার নদনদীতে জোয়ারের উচ্চতা ছিল ৩ দশমিক ৬৮ মিটার এবং রাতের জোয়ারের উচ্চতা ছিল ৩ দশমিক ৪৮ মিটার। ইয়াস চলে গেলেও পূর্ণিমার কারণে জোয়ারের পানির উচ্চতা কমেনি বরং বৃহস্পতিবার সকালের জোয়ারে তা বৃদ্ধি পেয়েছে। বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কাওসার আলম জানান, জেলায় ১৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বন্যার পানি জোয়ারের পানির সাথে প্রবেশ করে। যার ফলে ১৬ দশমিক ৩ কিলোমিটার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্তের টাকার পরিমান তিন কোটি। তবে ইতোমধ্যে মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যেই মেরামতের কাজ সমাপ্ত করতে পারব। বরগুনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বরগুনায় মৌসুমে ১৮৫ হেক্টর জমিতে ধান রোপন করে বীজতলা প্রস্তুত করা হয়েছিল।
এছাড়া বীজ বপন করা হয়েছিল ৭৭২ হেক্টর জমিতে। জোয়ারের পানির তোড়ে তৈরি বীজতলার নব্বই ভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বপন করা বীজের এক-তৃতীয়াংশ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে কত টাকার আউশের আবাদ ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপণ করতে পারেনি কৃষি বিভাগ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরগুনা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবদুর রশীদ জানান এখন পর্যন্ত জোয়ারের পানিতে বিভিন্ন এলাকার বীজতলা প্লাবিত রয়েছে। যে কারণে আউশের ক্ষতি নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি। পানির উচ্চতা কমলে জানা যাবে কৃষিতে কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে। ইয়াসের কারণে বরগুনার ৪৩টি পানের বরজ, ৭ হেক্টর জমির মরিচ, ৮ হেক্টরের পেঁপে, ১৭ হেক্টর জমির হলুদ ও ২৩১ হেক্টর জমির অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দেব জানান, বরগুনায় ইয়াসের কারণে জলোচ্ছ্বাসে ছয় উপজেলার ১ হাজার ২৪৯টি ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। যার আয়তন ৭৪ হেক্টর। পুকুর ও ঘের মিলিয়ে ৬০ মেট্রিকটন মাছ জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে বলে তিনি জানান। যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ২ লাখ ৮২ হাজার টাকা।
এছাড়া বরগুনার কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের ব্রাইট অ্যাগ্রো সার্ভিসের বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে চাষ করা ৬০ হাজার টাকা মূল্যের কৈ মাছ বিদুৎ না থাকায় মারা গেছে। মৎস্য বিভাগ জানায়, সবচেয়ে বেশি মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে তালতলী উপজেলায়। এখানে ৬৯৯টি মাছের ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। আমতলী উপজেলায় ২৪০টি, বরগুনা সদর উপজেলায় ১২৫টি এবং ১৫৫টি ঘের ও পুকুরের মাছের ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ইয়াস ও পূর্ণিমার জোতে সৃষ্ট জোয়ারের প্রভাবে জেলার বিভিন্ন স্থানের বাঁধ ভেঙে ও উপচে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে পরিদর্শন করে ক্ষয়-ক্ষতির তালিকা নিরুপণের জন্য বলা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আমরা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করব।